বিটুবি লিড জেনারেশন কি? লিড জেনারেশন মার্কেটিং কী? (২য় পর্ব)

 লিড জেনারেশন

বিটুবি লিড জেনারেশন কি?

বিটুবি লিড জেনারেশন কি? লিড জেনারেশন মার্কেটিং কী? (২য় পর্ব)


গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অংশটি। আজকে আমরা আলোচনা করবো লিংকড-ইন অ্যাডভার্টাইজিং এবং কো মার্কেটিং নিয়ে, তো চলুন শুরু করা যায়।

লিংকড-ইন অ্যাডভার্টাইজিং 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে লিংকড-ইন। যেখানে প্রায় ৬৪৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে এবং বলা হয়ে থাকে কর্পোরেট জগতের ৭৯% ভাগের বেশি জব পার্থীদের যাচাই বাচাই এর জন্য লিংকড-ইন এর সহায়তা নেওয়া হয়। 

লিংকড-ইন প্ল্যাটফর্ম মূলত ডিজাইন করা হয়েছে প্রফেশনাল স্কিল এর তথ্য আদান প্রদান করার জন্য। ফলে এই প্ল্যাটফর্মে রয়েছে বিশাল বিজনেস রিলেটেড ডাটা যা সবচেয়ে কার্যকর বিটুবি লিড জেনারেশনের এর ক্ষেত্রে। যে কেউ লিংকেডইন এর কাছে ডাটা চাইলে তারা পেমেন্টের বিনিয়মে ডাটা দিয়ে বিজনেসের জন্য সহায়তা করে থাকে। তাই মার্কেটারদের জন্য লিংকেডইন লিড জেনারেশন করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য স্থান হয়ে উঠেছে। 

বিটুবি লিড জেনারেশন কি?

বিজনেস টু বিজনেস (B2B) লিড জেনারেশন হচ্ছে আপনার নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের জন্য আইডিয়াল কাস্টমার খুঁজে বের করা, তাদের আকৃষ্ট করা এবং তাদের নিকট সেল করার আগ্রহ সৃষ্টি করা। 

যেহেতু লিংকেডইনে রয়েছে বিশাল তথ্য ভান্ডার এবং ৬১ মিলিয়ন সিনিয়র লেভেল ইনফ্লুয়েন্সার ( যাদের মধ্যে ৪০ মিলিয়ন লোক ডিসিশন নেওয়ার মত ক্ষমতার আসনে রয়েছে ), তাই এখানে মার্কেটিং করে খুব শিগ্রই কর্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ এই প্লাটফর্মটি অন্যন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মত নয়। এখানে প্রয়োজনীয় লোকদের খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো খুব সহজে খুঁজে বের করা যায়। 

এই সকল দিক বিবেচনায় লিংকড-ইন লিড জেনারেশনের জন্য অনেক জনপ্রিয় এবং কার্যকর। 

কারণ এখানে একটা কোম্পানির সিইও থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্লার্ক এবং ইন্টার্ন করা লোকের অবধি খোজ খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে, যারা কোম্পানির ডিসিশন মেইকিং এর দায়িত্বে থাকে তাদেরও লিড এই লিংকড-ইনে পাওয়া যায়, যা একজন লিড জেনারেটরের অন্য অনেক বেশি কার্যকর।

লিড জেনারেশন ফানেল কি?

সুবিধা হচ্ছে যখন এই ধরনের লোকদের এই প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়, তাদের সহজে ইনফ্লুয়েন্স করে সেলস বাড়ানো যায়। কারণ ফেসবুক বা অন্যানা প্ল্যাটফর্মের সবাই কাজের ব্যাপারে সিরিয়াস থাকে না। 

আর লিংকেডইনে প্রচুর পরিমানে ডাটা থাকার ফলে একজন লিড জেনারেটর খুব সহজে নির্ধারণ করে ফেলতে পারে কাকে টার্গেট করেলে সেলস বাড়বে আর কাকে টার্গেট করা যাবে না। লিংকড-ইন একজন মানুষ সম্পর্কে যত পরিমান ডাটা নিয়ে থাকে, তা আর কোন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে থাকে কিনা জানা নেই। আর তাদের ডাটাকে কাজে লাগিয়ে শত শত মানুষ উপকৃত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। 

লিংকেডইনে সরাসরি বিল্ড-ইনে লিড জেনারেশন অ্যাড দেওয়ার অপশন চালু আছে। ফলে আলাদা করে লিড কালেক্ট করার জন্য ল্যান্ডিং পেইজ তৈরি করতে হয় না। লিংকেডইনে লিড অ্যাড ক্যাম্পেইন রান করাতে গেলে বেশ কয়েকটি অবজেক্টিভ (দিক) নির্ধারণ করে দিতে হয়। যেমন-
  • ওয়েবসাইট ভিজিট
  • ওয়েবসাইট কনভার্সন
  • লিড জেনারেশন 

যদি আপনি লিড জেনারেশন এর উদ্দেশ্যে ক্যম্পেইন রান করাতে চান, তাহলে আপনাকে  হয়তো ওয়েবসাইট ভিজিটেড নয়তো লিড জেনারেশন অবজেক্টিভে সিলেক্ট করে নিতে হবে। যদি ওয়েবসাইট অবজেক্টিভ নির্ধারন করে থাকেন, তাহলে আপনাকে আলাদা করে ল্যান্ডিং পেইজের কথা ভাবতে হবে। অথবা আপনি যদি লিড জেনারেশন অবজেক্টিভ নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ল্যান্ডিং পেইজের জন্য ছোটাছুটি করতে হবে না। আপনি লিড সরাসরি লিংকড-ইন প্ল্যাটফর্মে সংগ্রহ করতে পারবেন। 

ক্যম্পেইন অবজেক্টিভ যদি নির্ধারন করে থাকেন, তাহলে এবার কাজ হচ্ছে কাদেরকে টার্গেট করবেন তাদের নির্ধারন করার পালা। যেমন-

  • কোম্পানী
  • ইন্ডাস্ট্রি
  • ডেমোগ্রাফিক্স
  • এডুকেশন
  • জব এক্সপেরিয়েন্স
  • ইন্টারেস্ট

এই সকল ম্যাট্রিক্স আপনি সহজে নির্ধারন করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট কোম্পানীকে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন রান করাতে চান, তাহলেও সেটি করাতে পারবেন। ধরুন আপনি ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে যারা পড়ে, তাদের টার্গেট করে তাদের লিড সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন। তাহলেও আপনি এডুকেশনে ব্রাক ইউনিভার্সিটি নির্ধারণ করে দিতে পারেন। ফলে আপনার তৈরি ক্যম্পেইন গুলো শুধুমাত্র ব্রাক ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট এর নিকট পৌছাবে। 

লিড জেনারেশন মার্কেটিং কী? (১ম পর্ব)

এছাড়াও নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি বা কোম্পানীর কাওকে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঐ কোম্পানীটি সিলেক্ট করে দিতে হবে আগে থেকে। যেমন আপনি যদি চান, যারা “প্রাণ গ্রুপে” কাজ করে তাদের লিড সংগ্রহ করবেন, তখন কোম্পানীতে প্রাণ কে টার্গেট করে দিলে, প্রাণে যারা কাজ করে তাদের টাইমলাইনে লিংকড-ইনে জরিপ যাবে। ফলাফল খুব সহজে নির্ধারিত কোম্পানীর অরিজিনাল লিড পেয়ে যাবেন। এরপর এই গুলো নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আপনি ক্রিয়েট এড অপশনে ক্লিক করতে পারবেন। সেখানে বেশ কিছু অপশন আপনার সামনে শো করাবে। যেমন-

  • স্পন্সরড কন্টেন্ট
  • স্পন্সরড ইনমেইল
  • টেক্সট এডস 

প্রতিটি অপশনের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে, যেমন আপনার যদি ওয়েবসাইটে ট্রাফিকের প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আপনি স্বভাবত স্পন্সরড কন্টেন্ট নির্ধারন করে দিতে পারেন। যা আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়াতে সহায়তা করবে। যেখানে আপনি আলাদা করে ল্যান্ডিং পেইজ তৈরির মাধ্যমে একই সাথে লিড এবং ট্রাফিক দু’টোই সংগ্রহ করতে পারবনে। ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর মাধ্যমে কাস্টমারকে প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডাটা শেয়ার এর ঘোষণার মাধ্যমে আপনার ল্যান্ডিং পেইজের জন্য অ্যাড ক্যাম্পেইন নির্ধারণ করতে পারেন। যাতে করে তারা আপনাকে লিড শেয়ারের বিনিময়ে ভালো মানের কন্টেন্ট ফ্রিতে পেয়ে যায়। 

এছাড়াও চাইলে সরাসরি লিংকেডইনে এডের মধ্যেই আপনি ডাউনলোড বাটন বসিয়ে দিতে পারেন। যেন ইউজার দেখেই আকৃষ্ট হয়ে বসে, এবং ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বসে। এখানে যদি ডাউনলোড বাটনে ক্লিকও করে, তাহলে তাদের লিংকেডইন সরাসরি একটি লিড সংগ্রহ করার মত ফর্ম দিবে, যেখানে শুধুমাত্র ফর্ম গুলো পূরণের মাধমে আপনি ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ল্যান্ডিং পেইজের প্রয়োজন পড়বে না। 

স্পন্সরড ইনমেইল হচ্ছে স্বতন্ত্র ভাবে সবাইকে মেসেজের মাধ্যমে ক্যম্পেইন রান করা। এই স্পন্সরড মেইলের সাহায্যে আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সকে সরাসরি মেসেজ করতে পারবেন, জানাতে পারবেন আপনার অ্যাড এর কথা। এটিও অনেক জনপ্রিয় কারণ মেসেজকে অনেকেই আছেন বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকেন, এবং ওপেন করার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এক্ষেত্রে আপনার হাতে অনেক বেশি পরিমানে কন্টেন্ট থাকে স্পন্সরড কন্টেন্টের ক্যম্পেইনের তুলনায়। কারন আপনি যদি টার্গেট করে ফেলতে পারেন, কারা আপনার সম্ভাব্য লিড, তাহলে আপনি খুব সহজে তাদের কাছে মেসেজের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারবেন। স্পন্সরড মেইলের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হচ্ছে, এখানে সরাসরি একটি বন্ডিং তৈরি করা সম্ভব হয়। 

২০২১ সালের সেরা ৫ টি ভিপিএন (VPN)

টেক্সট অ্যাড হচ্ছে পে-পার-ক্লিক (পিপিসি) অথবা কস্ট পার ক্লিক অ্যাড। যেখানে শুধুমাত্র যখন টার্গেটেড অডিয়েন্স আপনার অ্যাডে ক্লিক করবে, তখন আপনাকে পে করতে হবে। এই ক্যম্পেইন খুব সহযে তৈরি করা যায় এবং পাব্লিশও শিগ্রই করা সম্ভব। 

সর্বশেষ সবকিছু নির্ধারণ করার পর বিড এবং বাজেট এর পরিমান নির্ধারণ করে দিতে হবে, যা মূলত নির্ধারণ করবে কতজনের কাছে আপনার লিড পৌছাবে। আপনিও ঐ অনুযায়ী পে করতে পারবেন, কতজনের কাছে পৌছালে আপনার ক্যাম্পেইন এর উদ্দেশ্য সফল হবে। 

সহজ কথায়, আপনি যত বেশি পরিমানে ক্যম্পেইনের পেছনে ইনভেস্ট করবেন, তত বেশি ট্রাফিক এবং লিড জেনারেট করতে পারবেন। কারন আপনার ব্যয়য়ের উপর নির্ভর করে সব কিছু। যতটুকু পরিমান ব্যয় করবেন, লিংকেডইন কতৃপক্ষ ততজনের কাছে আপনার অ্যাড পৌঁছে দিবে। 

আজকের পর্ব এখানে সমাপ্তি করছি, আগামি পর্বে আমরা লিড জেনারেশন মার্কেটিং অংশের কো-মার্কেটিং এর বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। সেই পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন। 

No comments

Powered by Blogger.