আপওয়ার্ক

 

আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সিং করবেন কিভাবে? – ১ম পর্ব

how-to-work-on-wpwork

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে আপওয়ার্ক www.upwork.com । ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই মার্কেটপ্লেসটি পূর্বে ওডেস্ক নামে পরিচিত ছিল, ২০১৫ সালে অন্য আরেকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সের সাথে একত্রিত হয়ে এটি আপওয়ার্ক নামে পরিচালিত হয়।

আপওয়ার্ক বা অন্য যেকোন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে যদি আপ নি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে চান তবে আপনাকে যেকোন একটি কাজে (যেমন – ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আর্টিকেল রাইটিং, এসইও , এফিলিয়েট মার্কেটিং, এন্ড্রয়েড এপস ডেভলাপমেন্ট, সফ্টওয়্যার ডেভলাপমেন্ট ইত্যাদি) দক্ষ হতে হবে। সাধারণত সবগুলো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসেই নিচের ক্যাটাগরির কাজগুলো পাওয়া যায়।

freelance-work-category

এসব বিষয়ের যেকোন একটিতে দক্ষ হলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন আর এসব বিষয়ে দক্ষতা না থাকলে প্রথমে যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জনের পর ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।

ধরে নিচ্ছি আপনি উপরে উল্লেখিত কোন একটি বিষয় খুব ভালভাবে জানেন অর্থাৎ কোন একটি বিষয়ে আপনার খুব ভাল অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাহলে আমরা দেখব আমরা অপওয়ার্কে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারি। আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সিং করার কয়েকটি ধাপ রয়েছে, যেমন –

১) কোন একটি কাজে দক্ষ হওয়া।

২) আপওয়ার্কে একাউন্ট/প্রোফাইল তৈরি করা।

৩) ন্যাশনাল আইডি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে প্রোফাইল ১০০% কমপ্লিট করা।

৪) আপনার স্কিলসেট/দক্ষতার কিছু পরীক্ষা দেয়া এবং কয়েকটি পোর্টফোলিয় রাখা।

৫) জব ভালভাবে বুঝে বিড/এপ্লিকেশন করা।

৬) প্রজেক্ট পাওয়ার পর ভালভাবে সম্পন্ন করা এবং সটিক সময়ে প্রজেক্ট ক্লায়েন্ট এর কাছে সাবমিট করা।

৭) প্রজেক্ট সাবমিটের পর রেটিং/ফিডব্যাক নেয়া।

৮) পেমেন্ট উত্তোলন।

#১ প্রথমে কোন একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করা:

প্রথমেই আপনার ভাললাগে এমন কোন একটি কাজ শিখতে হবে। আপনি ইন্টারনেট থেকে গুগলে সার্চ করলে আপনার পছন্দের বিষয়ের টিউটরিয়াল পাবেন, সেখান থেকে শিখতে পারেন আথবা কোন একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে শিখতে পারেন বা ভালো কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পছন্দের বিষয়টি শিখে নিতে পারেন। মোটকথা হচ্ছে যেভাবেই হোক আপনাকে কোন একটি কাজে দক্ষ হতে হবে। সাধারণত দক্ষতা অর্জন করতে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত লাগতে পারে এটি নির্ভর করবে যে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ হবেন।

প্রথমেই আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ হবেন। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে একটু রিসার্চ করতে হবে। আপনাকে দেখতে হবে যে ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কোন বিষয়টি ডিমান্ডেবল। কোন বিষয়ে বেশী কাজ পাওয়া যায়, কোন বিষয়ের ভবিষৎ কেমন। এই রিসার্চগুলো আপনি গুগলে করে নিতে পারেন বা অভিজ্ঞ কোন ফ্রিল্যান্সারের সাথে পরামর্শ নিতে পারেন। মার্কেটপ্লেসগুলো ঘ্টলে দেখা যায় যে ওয়েব ডিজাইন,ওয়েব প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আর্টিকেল রাইটিং, এসইও , এফিলিয়েট মার্কেটিং, এন্ড্রয়েড এপস ডেভলাপমেন্ট, সফ্টওয়্যার ডেভলাপমেন্ট ইত্যাদির কাজ বেশি পাওয়া যায়। এসব বিষয়ের কোন একটি বা অন্য কোন বিষয় নির্বাচন করলে তার সাথে দেখবেন বিষয়টি আপনার পছন্দের কিনা।

পছন্দের বিষয় না হলে এখানে আপনি ভাল করতে পারেন না। সুতরাং আপনি বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে [ মার্কেট ডিমান্ড + ভবিষৎ + নিজের পছন্দ/ভাললাগা ] গুরুত্ব দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাও বিবেচনায় আসতে পারে।

বিষয় নির্বাচন করা এবং কাজে দক্ষ হওয়ার পর আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। বাংলাদেশে সংবাদপত্র, ডিজিটাল মিডিয়া, সরকারের আইটি বিভাগ, বিডিওএসএন, বেসিস এর প্রচারণা এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে অনেক পরিচিত, বেশিরভাগ মিডিয়াগুলো শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সারদের বিশাল সফলতা এবং আয়ের কথাই তুলে ধরে থাকে। ফলে জনসাধারনের মনে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে একটি পজেটিভ ধারণা তৈরি হয়েছে আবার অনেকেই বিশাল আয়ের কথা চিন্তা করেই কিছু না বুঝেই বলে যে আমি ফ্রিল্যান্সিং শিখব, আসলে ফ্রিল্যান্সিং শেখার কিছুই নেই, ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি প্রসেস, আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কাজ শিখতে পারেন এবং কাজ শেখার পর আপনি মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জেনে সেখানে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।

#২ আপওয়ার্কে একাউন্ট/প্রোফাইল তৈরি করা:

     আপওয়ার্ক হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস। এখানে একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। আপনি ফেসবুক, টুইটার, জিমেইল এ যেভাবে একাউন্ট অপেন করেন এখানেও মোটামোটি এরকমই। একাউন্ট তৈরির জন্য বাউজ করুন www.upwork.com তারপর নিচের চিত্র:১ এর মত হোমপেজটি আসবে, এখান থেকে SIGN UP বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আরেকটি পেজ অপেন হবে চিত্র:২ এর মত, সেখান থেকে I’m looking for online work সেকশনের work বাটনে ক্লিক করুন। এটি হচ্ছে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চায় তাদের জন্য।

 

চিত্র:১চিত্র:২
sign-up-upworksign-up-as-freelancer

work বাটনে ক্লিক করার পর নিচের মত আরেকটি সাইন আপ ফরম আসবে –

signup-form

এখানে আপনি আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস, কান্ট্রি, ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে তাদের টার্মস -পলিসি একসেপ্ট করে Get Started বাটনে ক্লিক করলেই আপনার একাউন্টটি তৈরি হয়ে যাবে। দে তারপর আপনার ইমেইল এড্রেস ভেরিফাই করতে হবে। আপওয়ার্ক থেকে আপনার দেয়া ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিংক যাবে এটিতে ক্লিক করলেই আপনার একাউন্টটি ভেরিফাই হয়ে যাবে।

আপনি এই ফর্ম ফিলাপ না করেও আপনার ফেসবুক, লিংকটইন অথবা আপনার জিমেইল আইডি দিয়েও সাইন আপ   করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে You can also sign up with FacebookLinkedin, or Google. এর FacebookLinkedin, or Google যেকোন একটি লিংকে গিয়ে আপনার একাউন্ট দিয়ে লগিন করলেই হবে।

[* বি.দ্র: সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সব বড় বড় স্যোসাল মিডিয়া, মার্কেটপ্লেস এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলো তাদের নিরাপওা এবং টার্মস -পলিসি জোরদার করছে তাই আপনার একাউন্ট খোলার সময় আপনার সঠিক নাম এবং সঠিকতথ্য দিয়ে সবসময় একাউন্ট খুলবেন। আপওয়ার্কে একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ডে যে নাম আছে সেটি দিবেন এবং এই নামের সাথে আপনার ব্যাংক একাউন্টের নামের মিল থাকতে হবে ]

এই পর্বে এ পর্যন্তই, আমরা আগামী পর্বে দেখব কিভাবে আমরা একটি ভাল আপওয়ার্ক প্রোফাইল তৈরি করতে পারি যা আমাদেরকে ফিল্যান্স কাজ পেতে সহায়তা করবে। হ্যাপি ফিল্যান্সিং 

আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সিং করবেন কিভাবে? -২য় পর্ব


building-a-great-profile

 

গত পর্বে আমরা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কের কিছু বেসিক বিষয় এবং একাউন্ট তৈরি করা দেখেছিলাম। একাউন্ট তৈরি করার পর আপনার প্রোফাইল ভালকরে তৈরি করতে হবে, আমরা এই পর্বে দেখব কিভাবে নিজের একটি ভাল প্রোফাইল তৈরি করতে হয় (Building a great profile)।

আপনার একাউন্ট তৈরি এবং ইমেইল থেকে একাউন্ট ভেরিফিকেশনের পর আপনি যখন আপওয়ার্কে লগিন করবেন তখন নিচের চিত্রের মত দেখতে পাবেন –

 

upwork-create-my-profile

 

এখান থেকে Create my Profile বাটনে ক্লিক করে নিজের প্রোফাইল তৈরি করা শুরু করুন। বাটনে ক্লিক করার পর প্রথমেই আপনাকে কাজের ক্যাটাগরি এবং সাব ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। তারপর Introduce Yourself  নামে একটি ফরম আসবে –

 

upwrok-infroduce-yourself

 

Portrait:

এখানে আপনার একটি প্রফেশনাল ফটো দিন। প্রফেশনাল ফটো কেমন হবে দেখে নিন এই লিংক থেকে ফটোটিতে যেন আপনার চেহারা পরিস্কার বোঝা যায় এবং হাস্যোজ্জল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন, ফটোটি প্লেইন কালার ব্যাকগ্রউন্ড হলে ভাল। ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে আপনার বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই হবে পশ্চিমা দেশগুলোর, সেখানে এমন প্রোফাইল ফটোই হলো স্যান্ডার্ড। আর আমাদের দেশের সিভি/রিজিউম স্যান্ডার্ড ফটো হচ্ছে স্যুটটাই পরা সিরিয়াস মুডের ফটো, এমন ফটো ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল এ না দেয়াই ভাল, এখানে আরো কিছু স্যাম্পল ফটো এবং গাইডলাইন আছে দেখে নিতে পারেন।

Professional Title:

এখানে আপনি কি করেন তা লিখেন। যেমন আপনি ওয়েব ডিজাইনার হলে লিখতে পারেন Web Designer বা Frontend Web Designer বা Creative Web Designer গ্রফিক ডিজাইনার হলে লিখতে পারেন Graphic Designer বা Creative Graphic Designer

Overview:

অভারভিউ সেকশনে আপনার কি কি দক্ষতা আছে, কতদিনের অভিজ্ঞতা আছে, আপনার পূর্বের প্রজেক্টের অভিজ্ঞতা, যোগাযোগের দক্ষতা ইত্যাদি বর্ণনা করতে পারেন, সর্বোপরি আপনার সম্পর্কে, সার্ভিস সম্পর্কে কিছু লিখতে পারেন। চেষ্ঠা করবেন খুব কম কথায় নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে এবং লেখায় যেন কোন ভুল না থাকে।

Skills:

এখানে আপনি যে কাজগুলো পারেন সেগুলো লিখতে পারেন। যেমন আপনি ওয়েব ডিজাইন পারেন তাহলে আপনি এখানে Html, css, psd-to-html ইত্যাদি লিখতে পারেন। এগুলো হচ্ছে একএকটি ট্যাগ, এগুলো ভালভাবে দিলে ক্লায়েন্ট আপনাকে সহজে সার্চ করে পাবে।

English Proficiency:

এখানে আপনি কতটুকু ইংরেজি জানেন তা সিলেক্ট করে দিন।

Other Languages:

অন্য কোন ভাষা জানলে তা এখানে যোগ করে দিতে পারেন।

Availability to work on Upwork:

আপনি সপ্তাহে কতক্ষন কাজ করতে পারবেন তা উল্লেখ করে দিন। তথ্যগুলো দিয়ে Save & Continue বাটনে ক্লিক করুন। তারপর Experience & Education নামে আরেকটি পেজ আসবে –

 

upwrok experience & education

 

এখানে আপনার কাজের Experience Level কাজের কত দিনের তা নির্বাচন করুন

Employment History:

পূর্বে কোথাও কাজ করলে তা এখানে বর্ণনা করুন।

Education:

আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এখানে বর্ণনা করুন।

Certifications:

আপনার যদি Microsoft, Cisco, Zend, Adobe, IELTS বা অন্য কোন সার্টিফিকেট অর্জন করা থাকে তাহলে এখানে বর্ণনা করুন।

Portfolio Projects:

এটি ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পোর্টফোলিও হচ্ছে আপনার পূর্বের করা কাজ। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনার হন তাহলে পূর্বে যেসব ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছেন তা এখানে দিন বা আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হন তাহলে পূর্বে যেসব লগো, বিজনেস কার্ড বা ফ্লায়ার ডিজাইন করেছেন তার কয়েকটি Sample এখানে যুক্ত করে দিন। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে পোর্টফোলিও ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট পেতে সাহায্য করে। কমপক্ষে ৫টি পোর্টফোলিও এখানে যোগ করে দিন। তারপর Save & Continue বাটনে ক্লিক করুন, তখন Final Details নামে আরেকটি পেজ আসবে –

 

upwrok final details

 

Set your Hourly Rate:

এখানে আপনি আপনার কাজের ঘন্টাপ্রতি রেট দিন। আপওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন আপনার ক্যাটাগরির কাজের জন্য অনর‌্যা কেমন ঘন্টাপ্রতি রেট নেয়। সাধারনত কাজের ক্যাটাগরি এবং ফ্রিল্যান্সারের অভিজ্ঞতার ভিওিতে ঘন্টাপ্রতি রেট ৫ ডলার থেকে ১০০ ডলার হয়ে থাকে।

 

Location Information:

আপনার ঠিকানা ফোন নাম্বার ইত্যাদি দিয়ে Save & Continue বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আরেকটি পেজ আসবে এখানে Submit for Review বাটনে ক্লিক করুন এবং আপনার মেম্বারশিপ প্লান সিলেক্ট করুন। তখন আপনার প্রোফাইলটি আপওয়ার্ক রিভিউ করবে। রিভিউ এর জন্য সাধারণত ১২ ঘন্টা সময় নেয়।

এই পর্বে এপর্যন্তই, আমরা আগামী পর্বে দেখব কিভাবে এই আপওয়ার্ক প্রোফাইলটিকে ১০০% প্রফেশনাল করতে পারি । তারপর এই মার্কেটপ্লেসের বৈশিষ্ঠগুলো দেখার পাশাপাশি এখানে কিভাবে বিড/এপ্লিকেশন করতে হয়, কিভাবে কমিউনিকেশন করতে হয়, প্রজেক্ট পাওয়ার পর কিভাবে সমাপ্ত করতে হয়, কিভাবে টাকা তুলতে হয় সবগুলো বিষয় দেখব।

upwork account suspend

সম্প্রতি আপওয়ার্ক কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট ব্যানড/সাসপেন্ডেড/হোল্ড হওয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে; বোঝাই যাচ্ছে আপওয়ার্ক নিরাপত্তাজনিত কারনে তাদের কন্ট্রাক্টরদের প্রতি আরোপ করা নীতিমালা আগের তুলনায় আরো কঠোরভাবে পালন করছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান আর ফিলিপাইনের বেশ কয়েকজন কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট ব্যানড হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকই ১০০০ ঘন্টারও অধিক কাজ করেছেন। আসলে আপওয়ার্ক এই সাসপেনশন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো প্রায় ৩ বছর আগেই, যখন মার্কেটপ্লেস ওডেস্ক নামে পরিচিত ছিল।

আপওয়ার্কের এত কঠোরতার কারনঃ

সম্প্রতি আপওয়ার্ক বাংলাদেশের কয়েকজন হাই প্রোফাইলড কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে। আপওয়ার্ক কোন কারন ছাড়া নিশ্চয়ই এত ভালো কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করবে না। অনেকই দোষ দিচ্ছেন আপওয়ার্ককে, কিন্তু তা ঠিক নয়।অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানে জন্য কন্ট্রাক্টরদের বিহেভিয়ারই বহুলাংশে দায়ী| আপওয়ার্ক টার্মস এন্ড পলিসি সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা ইচ্ছাকৃত অবহেলা-ই অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে| সুতরাং নিরাপত্তা ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই ক্ষেত্রবিশেষে তাদের নিবন্ধিত কন্ট্রাক্টরদের অ্যাকাউন্ট ব্যানড/সাসপেন্ডেড/হোল্ড করে থাকে।

অ্যাকাউন্ট সাসপেনশানের কারন ও প্রতিকারঃ

আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট কারন রয়েছে| আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নিম্নোক্ত বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, ফলে অনাকাঙ্খিত অ্যাকাউন্ট ব্যানিং/সাসপেনশন/হোল্ড্স থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে|
ক) এক পিসি থেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলাঃ একই পিসি বা আইপি থেকে একাধিক আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট তৈরী করা আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট ব্যানড হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ভেবে দেখুন যারা প্রফেশনাল, তারা নিজের কাজ করে নিজের পিসিতেই এবং প্রফেশনালরা কখনই নিজের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিজের পিসি থেকে অন্যথা ব্যবহার করবে না।
আবার নিজের আইপি থেকে অন্য আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্টধারীর অ্যাকাউন্টেও লগ-ইন করা যাবেনা, ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্টেতো (যেকোনো প্রয়োজনে, এমনকি ক্লায়েন্ট চাইলেও) নয়-ই|
খ) অন্যের প্রোফাইল নকল করাঃ একজন ভালো মানুষ হিসেবে আপনি অবশ্যই অন্য একজন মানুষের কোন জিনিস নকল করতে চাইবেন না। আপনি অন্য কাউকে অনুসরণ করতে পারেন মাত্র, অনুকরণ নয়। কিন্তু হায় অনেক বাংলাদেশি কনট্রাক্টর বড় বড় প্রোফাইলড কনট্রাক্টরদের আপওয়ার্ক প্রোফাইল পুরোপুরি নকল করে ফেলেন। কোন সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে একই ধরনের কোন উত্তর যখন কোন শিক্ষক পান তখন তিনি নিজেই বুঝে নেন, এখানে কোন ঘাপলা আছে। তেমনি আপনি যখন কোন কনট্রাক্টর-এর প্রোফাইল এ রাখা কনটেন্টগুলো নিজের প্রোফাইলে রাখবেন সেগুলো কোন না কোন সময় কারো না কারো চোখে পড়বে।পাশাপাশি আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি সনাক্ত করতে পারে। আর এই রকম পেলে অব্যশই ব্যবস্থা নিবে আপওয়ার্ক।
গ) পোর্টফোলিও আইটেম চুরিঃ পোর্টফলিও বলতে আমরা বুঝি আগে করা কাজগুলোর আর্কাইভ। আপনি যদি কারো আইটেম চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দেন সেটা ঘৃন্য অপরাধ। অনেক নতুন কনট্রাক্টরদের দেখলাম ভালো মানের আইটেম অন্য কোন কনট্রাক্টর এর প্রোফাইল থেলে চুরি করে নিজেরটায় বসিয়ে দেন। উদাহরণস্বরূপ যখন কেউ আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তখন তাকে ১০০ ভাগ প্রোফাইল কমপ্লিট করতে বলা হয়। নতুন কনট্রাক্টরদের প্রোফাইল ১০০ ভাগ পূর্ন করার জন্য অন্যের আইটেম চুরি করতে দেখা যায়। উপদেশ হল এ রকম না করে নিজে কোন ডেমো কাজ করে অন্তত নিজের একটাই দিন। অন্যেরটা দেয়া মানে আপনি কাজ জানেন না, জানলে নিজে না করে চুরি করবেন কেনো?
ঘ) কাভার লেটার স্পামিংঃ আমাদের মধ্যে এক ধরনের অলসপ্রবণতা কাজ করে; আবার সেটা ইংরেজি ভাষায় দূর্বলতার জন্যও হতে পারে। বলাবাহুল্য, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এর কাজ করতে ইংরেজীতে পারদর্শী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত প্রজেক্টের চাহিদা বুঝা এবং সে অনুযায়ী ক্লায়েন্টের সাথে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট ব্যানড হওয়ার অন্যতম কারণ কাভার লেটার স্প্যামিং, যাকে সোজা বাংলায় কপি-পেস্ট বলে। নিচে এ নিয়ে একটু বিস্তারিত লিখলামঃ
• প্রত্যেকটা জব পোষ্টে ক্লায়েন্ট যেমন ভিন্ন থাকে তেমন তাদের রিকোয়ারমেন্টও আলাদা থাকে। অনেকে ব্লগে বা অন্য কোথাও পড়ে অথবা নিজেই নির্দিষ্ট একটা কাভার লেটার বানিয়ে রাখেন। মনে মনে ভাবেন বার বার এত কষ্ট করার কি আছে? একটাই দিলাম সব জায়গায়। এটা এক ধরনের মূর্খামি! প্রত্যেকটা প্রশ্নের যেমন আলাদা উত্তর থাকবে তেমনি প্রতিটা জবের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী কাভার লেটারও ভিন্ন হবে।

• বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আপনি অনেক আইডিয়া পাবেন কাভার লেটার নিয়ে, স্যাম্পলও পাওয়া যাবে। আপনি সেগুলো দেখে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী নিজেরটা তৈরি করে নিবেন। ভুলেও সেগুলো কপি করে চালিয়ে দিবেন না। কাজতো পাবেনই না বরঞ্চ খারাপ ক্লায়েন্ট হলে আপনার নামে নালিশ করে দিবে আপওয়ার্ক-এর কাছে।

সাধারনত কাভার লেটার যেমন হয়ে থাকে-
Hi/Dear + ক্লায়েন্ট এর নাম/Hiring Manager,
আপনার সম্পর্কে কিছু আর জবের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু প্রশ্ন
শেষে আপনার নাম, যেমনঃ
Best Regards
Sumon

ঙ) কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ারঃ আপওয়ার্ক পলিসিতেই দেয়া আছে মার্কেটপ্লেসে কোন ধরনের কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করা যাবে না। শুধুমাত্র আপওয়ার্ক ম্যাসাজিং এর মাধ্যমে সব কিছু ম্যানেজ করা। কিন্তু অনেক ক্লায়েন্ট জব পোষ্টে বলে দেয় স্কাইপ আইডি দিতে। সাধারনত তারা পুরো পলিসি না বুঝেই জবটা পোস্ট করে থাকে। আবার কিছু দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় স্কাইপের মাধ্যমে যোগাযোগ ছাড়া জব এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনি ইহা সুকৌশলে এড়িয়ে যান। ক্লায়েন্টকে বলুন আপনার স্কাইপ আইডি আছে কিন্তু আপওয়ার্ক পলিসি কোন কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করতে বলে না। সে যদি চায় তাহলে আপনি দিতে পারনে কিন্তু তা ম্যাসেজ-এ দিবেন এবং যত ফিন্যান্সিয়াল ডিল হবে তা ১০০ ভাগ আপওয়ার্কে অন্য কোথাও নয়। যদি ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড হয় তাহলে সে নিশ্চিত ভাবে আপনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। এই পদ্ধতিতে সাপও মরবে লাঠিও ভাংগবে না। আপওয়ার্ক এই কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করার জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে বললে তখন আপনি বলবেন ক্লায়েন্টের যোগাযোগের সুবিধার্থেই আপনি তাকে কন্টাক্ট ইনফরমেশন দিয়েছেন এবং যত কিছুই লেনদেন হয়েছে তা আপওয়ার্কের বাইরে নয়।
চ) মাত্রারিক্ত ম্যানুয়াল আওয়ার যোগ করাঃ আপনার ক্লায়েন্ট নতুন অথবা কাজ দেয়ার পর কোন কারনে Hourly Limit সেট করে নাই, আপনি সেই সুযোগের ফায়দা উঠালেন। ট্র্যাকার দ্বারা কাজের সময় গুলো ট্র্যাক না করে নিজের ইচ্ছা মত বসিয়ে দিলেন Manual Hour অ্যাড এর মাধ্যমে। সপ্তাহ শেষে ক্লায়ন্টের কাছে মেইল গেল আপনার সুকর্মের। সব ক্লায়েন্টই আপওয়ার্ক-সাপোর্ট নামে একটা জিনিষ আছে সেটা জানে, তারা ভদ্রভাবে দিল টিকেট ওপেন করে। ডিস্পুট করলে হয়ত আপনার রিফান্ড করার অপশন থাকত কিন্তু এই অসাধু কাজের ফলে আপওয়ার্ক বুঝবে তার মান সম্মান আপনি নষ্ট করছেন। আর শুরু হবে আপনার উপর গজব।
আপনি ম্যানুয়ালি করা কাজগুলোর বিল তখনই যোগ করতে পারবেন যখন আপনার ক্লায়েন্টের সাথে আপনার মধুর সম্পর্ক থাকবে।
ছ) বায়ারের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করাঃ বায়ার যদি আপনার সাথে কোন রকম ভেজাল বা ঝগড়া করে তাহলে নিজে আ্যকশনে যাবার কোন দরকার নেই। বায়ারের সাথে কোন রকম বাকবিতন্ডা করবেন না। কারণ বায়ারের নেগেটিভ কমপ্লিমেন্ট আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে আপনি বায়ারের সকল উল্টা পাল্টা কর্মকান্ডের স্ক্রীনশট, তথ্য-প্রমানাদি সংরক্ষন করুন এবং ঠান্ডা মাথায় আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিন।

অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট সাসপেনশনঃ

বায়ারদের অ্যাকাউন্ট সাসপেনশনঃ

একই সাথে যাদের কন্ট্রাক্টর ও ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্ট আছে তাদের যেকোন একটি অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হলে অন্যটিও হবে।
বায়ার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড না হতে নিচের টিপসগুলো মেনে চলুনঃ
• আপনারা আপনাদের নিজস্ব কোন টিম মেম্বারকে হায়ার করবেন না। যদি এজেন্সি হয়ে থাকে।
• ভুয়া পেপাল আইডি পেমেন্ট মেথড হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট সাসপেনশনঃ

বায়ারদের কার্ড অথবা অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলে কাজ হোল্ড হয়ে যায় এবং কার্ড এ টাকা লোড হওয়া মাত্রই সব কিছু আগের মত ঠিক হয়।
কনট্রাক্টরদের ক্ষেত্রে কোন অনগোয়িং জবে ক্লায়েন্ট এর সাথে যোগাযোগ না রাখলে অথবা কায়েন্ট এর ম্যাসাজের উত্তর না দিলে যদি ক্লায়েন্ট সার্পোর্ট সেন্টারে জানায় তাহলে আপওয়ার্ক টিম কনট্রাক্টর এর ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে কিছু দিনের জন্য। যা সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ ও কারন দর্শানোর পর তুলে নেয়া হয়।

পরিসংহারঃ

সবশেষে, একজন প্রোফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কিভাবে কাজ করবেন তার জন্য কিছু টিপস যা হয়ত আপনার কাজে লাগবে অনেক। শুধু আপওয়ার্ক নয় অন্য যেকোন মার্কেটপ্লেসের জন্য আপনি এই টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
• সম্পূর্ণ কাজকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করুন এবং প্রতিটি ধাপ শেষ হবার পর পর ক্লায়েন্টকে দেখান।
• ডেডলাইন সময় শেষ হবার পূর্বেই সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করুন এবং ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দিন।
• ক্লায়েন্টের কাছে কাজ পাঠানোর পূর্বে ভাল করে রিকোয়ারমেন্ট আরেকবার দেখে নিন এবং সম্পূর্ণ কাজ ভাল করে পরীক্ষা করুন।
• কাজে এবং কথাবার্তায় সবসময় সৎ থাকতে হবে। কখনও ভুল তথ্য প্রদান করা যাবে না। কোন কারনে কাজ করতে না পারলে বিষয়টি ক্লায়েন্টকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন, বেশিভাগ ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা পাওয়া যায়।
• সব সময় চেষ্টা করবেন যাতে কাজ শেষে সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া যায়। ভাল রেটিং পেলে পরবর্তী কাজগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়।
• ভাল রেটিং পাবার উপায় হচ্ছে – সঠিকভাবে কাজটি করা, সময়মত কাজটি শেষ করা, ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
• রেটিং দেবার পূর্বে ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করে নিন যে সে আপনার কাজে সম্পূর্ণ খুশি কিনা এবং আপনাকে সর্বোচ্চ রেটিং দিতে যাচ্ছে কিনা।

No comments

Powered by Blogger.