অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
নতুন আইডি কার্ড তৈরি হয়ে গেলে মূলত দুটি উপায়ে সেই কার্ড বের করে নেয়া যায়।
- ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি
- অথবা মূল কপি
সাধারণত এনআইডি কার্ডের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও দেখা যায় কার্ডের মূল কপি হাতে পেতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই সেক্ষেত্রে আইডি কার্ডের অনলাইন কপি বের করে নিয়ে প্রয়োজনীয় যেকোন কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া মূল কপি পাওয়ার পরেও বর্তমানে বিভিন্ন কাজে এনআইডি কার্ডের অনলাইন কপি দরকার পরে।
এনআইডি কার্ডের অনলাইন কপি বের করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি জাতীয় পরিচয় পত্রের পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। অনলাইন পিডিএফ কপি ডাউনলোড করার পূর্বে অনলাইনে আপনার এনআইডি কার্ড ইতিমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে কিনা তা যাচাই করে নিন। অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে এখানে ক্লিক করুন।
এই লিংকে ক্লিক করার পর যে পেইজটি ওপেন হবে সেখানে সর্বপ্রথম ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অথবা ৮ সংখ্যার ফর্ম নম্বরটি প্রদান করুন। এরপর জন্ম তারিখ দিয়ে খালি পূরণ করে “ভোটার তথ্য দেখুন” বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধিত হয়ে থাকলে তার সমস্ত ডিটেইলস প্রদর্শিত হবে।
এভাবে অনলাইনে এনআইডি কার্ড চেক করার পর তা ডাউনলোড করে বের করে নিতে পারবেন। সরাসরি নির্বাচন অফিস থেকে কিংবা যেকোন কম্পিউটার দোকান থেকে অনলাইনে ভোটার কার্ড ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
অথবা নিজে নিজে আইডি কার্ড অনলাইন থেকে বের করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- প্রথমে NID Wallet অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করুন।
- এরপর এই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/claim-account ঠিকানায় প্রবেশ করুন।
- এখানে প্রথম ধাপে ৮ ডিজিটের স্লিপ নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে পর পর দুটি খালি ঘর পূরণ করে তা সাবমিট করে দিন।
- এরপর পরবর্তী ধাপে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করে আবারও “সাবমিট” করে দিন।
- এ পর্যায়ে আপনার মোবাইল নম্বর দেয়া না থাকলে তা দিন। আর দেয়া থাকলে “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।
- এ পর্যায়ে মোবাইল নম্বরে ৬ সংখ্যার একটি পিন কোড পাঠানো হবে। পরবর্তী ধাপে নির্দিষ্ট জায়গায় এই পিন কোডটি বসিয়ে পুনরায় “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।
- এ পর্যায়ে আপনাকে একটি QR কোড দেয়া হবে। এই কোডটি NID Wallet অ্যাপ দিয়ে স্ক্যান করে আইডি ধারীর মুখ বরাবর ধরতে হবে।
- এরপর পরবর্তী পেজে আপনার ইউজার নেইম এবং পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে এবং “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করে দিতে হবে।
- এবার পরবর্তী পেজটিতে এনআইডি কার্ড ধারীর ছবি সমেত সমস্ত তথ্য দেখানো হবে। এখান থেকে “ডাউনলোড” বাটনে ক্লিক করলেই ভোটার কার্ডের একটি সফট কপি ডাউনলোড হয়ে যাবে এবং এটি আপনি মূল কপির বিকল্প হিসেবে যেকোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি যদি নির্বাচন অফিস থেকে কোন কল কিংবা ম্যাসেজ পেয়ে থাকেন তবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে আপনি আপনার এনআইডি কার্ড বের করে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন যে, অনলাইন কিংবা অফলাইন যেখান থেকেই আপনি আপনার নতুন NID কার্ড বা স্মার্ট কার্ড বের করেন না কেনো, নির্বাচন অফিস থেকে প্রদানকৃত রশিদটি অবশ্যই আপনার সঙ্গে থাকতে হবে। নতুবা আপনি কোনক্রমেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড তুলতে পারবেন না।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য ভুল হওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়। সিংহভাগ লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের স্মার্ট কার্ডের তথ্যে কোথাও না কোথাও কোন না কোন ভুল রয়েছে। কখনও জন্ম তারিখ, কখনও নামের বানান কিংবা কখনও কখনও সম্পূর্ণ নাম-ই ভুল হয়ে যায়। আর বেশিরভাগ সময় আইডি কার্ডের এই ভুল তথ্য নিয়ে নানান বিপাকে পরতে হয়।
তাই আপনার আইডি কার্ডে যদি এরূপ কোনো ভুল থেকে থাকে তবে যত দ্রুত সম্ভব তা সংশোধন করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। একসময় এই কাজটি অনেক দুরূহ হলেও ভোটার আইডি কার্ডের সংশোধন এখন আর জটিল কিছু নয়। খুবই সাধারণ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের যেকোন ভুল তথ্য সংশোধন করে নিতে পারেন।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য এই ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
- এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য সর্বপ্রথম নতুন আরেকটি আবেদন ফরম অনলাইনে পূরণ করতে হবে। অথবা রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে যেয়েও এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করা যাবে।
- অনলাইনে আবেদন করা হলে আবেদন ফরমটির একটি হার্ডকপি পূর্বের আইডি কার্ডে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে।
- এখানে আবেদন পত্রের পাশাপাশি পুরনো ভোটার আইডি কার্ড এবং কার্ডের ভুল প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া শর্তসাপেক্ষে কাগজপত্রের সাথে কিছু টাকা জমা দিতে হতে পারে।
- এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তির জন্ম সনদ অথবা সার্টিফিকেট এবং বাবা কিংবা মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি।
এভাবে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দেয়া হয়ে গেলে আইডি কার্ডের সংশোধনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। পুরনো আইডি কার্ড সংশোধিত হয়ে পুনরায় নতুন আইডি কার্ড তৈরি হতে সাধারণত এক থেকে দুই মাস অথবা কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এরপরে কার্ড তৈরি হয়ে গেলে আপনার নাম্বারে কল কিংবা টেক্সট আসলে নির্বাচন অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ে তা সংগ্রহ করে নিলেই চলবে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরির নিয়ম সম্পর্কে আশা করি এখন জানতে পেরেছেন। আমাদের দেয়া উপরের এই ধাপগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কেউ তার নতুন এনআইডি কার্ড তৈরি করে নিতে পারবেন।
আর কারোর যদি 18 বছর বয়স পূর্ণ হয়ে থাকে তবে অনতিবিলম্বে তার এনআইডি কার্ড তৈরি করে নেয়াই উত্তম। এছাড়া কেউ যদি প্রবাসী হন যাদের এখনও স্মার্ট কার্ড তৈরি হয়নি অথবা যদি এমন কেউ থেকে থাকেন যার অনেক পূর্বেই 18 পেরিয়েছে কিন্তু এখানও আইডি কার্ড তৈরি হয়নি, তাহলে তারাও এই প্রক্রিয়ায় তাদের নতুন স্মার্ট কার্ড বা এনআইডি কার্ড বের করে নিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আরও প্রয়োজনীয় ইনফরমেশনের জন্য নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা বাংলাদেশ নির্বাচ কমিশনের ওয়েবসাইট কিংবা এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন ব্যক্তির কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে পারেন।
No comments