ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট

 web-design-tools

এই সংখ্যায় একজন ফ্রিল্যান্সার ওয়েবসাইট ডেভেলপারের প্রাত্যহিক কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার্য সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করা হল। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করতে অসংখ্য সাহায্যকারী সফটওয়্যার পাওয়া যায়। তারমধ্যে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের কেবলমাত্র একটি সফটওয়্যার নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল। উল্ল্যেখিত প্রত্যেকটি সফটওয়্যারই ওপেন সোর্স এবং ইন্টারনেট থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায়।

অপারেটিং সিস্টেম: উবুন্টু
ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য লিনাক্স হচ্ছে আদর্শ একটি অপারেটিং সিস্টেম। এর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভাইরাসের প্রভাব থেকে মুক্ত, উন্নতমানের সফটওয়্যারের বিনামূল্যে প্রাপ্যতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের জন্য লিনাক্স অত্যন্ত জনপ্রিয়। ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সার্ভার লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে চালানো হয়। তাই নিজের কম্পিউটারে সার্ভারের আমেজ পেতে ওয়েব ডেভেলপাররা মূলত লিনাক্স ব্যবহার করে থাকে। লিনাক্সের রয়েছে শত শত সংস্করণ, যার মধ্যে উবুন্টু হচ্ছে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম। বলা বাহুল্য, উবুন্টু ওয়েব ডেভেলপার ছাড়াও সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে সমান জনপ্রিয়। অপারেটিং সিস্টেমটি www.ubuntu.com সাইট থেকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করা যায়, অথবা shipit.ubuntu.com এ গিয়ে আবেদন করলে উবুন্টুর একটি সিডি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদনকারীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ওয়েবসাইট ব্রাউজার: ফায়ারফক্স
ওয়েবসাইট ডেভেলপারদের কাছে মজিলা ফায়ারফক্স (Firefox) ব্রাউজার প্রথম পছন্দ। দ্রুত এবং নিরাপদ ব্রাউজার হিসেবে ফায়রাফক্স দিনে দিনে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফায়ারফক্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিকে ব্যবহারকারীর নিজের ইচ্ছে মত পরিবর্তন করা যায়। ফায়ারফক্সের ওয়েবসাইট থেকে Add-ons বা অতিরিক্ত সফটওয়্যার ইন্সটল করে এটিকে একটি শক্তিশালী ওয়েব ডেভেলপমেন্ট টুলে পরিণত করা যায়। যা দিয়ে একটি ওয়েবসাইটে HTML, CSS, Javascript এর বিভিন্ন সমস্যা খুব সহজে এবং সাথে সাথে সমাধান করা যায়। ওয়েব ডেভেলপমেন্টে সাহায্যকারী কয়েকটি উল্লেখযোগ্য Add-ons হচ্ছে – Firebug, Web Developer, FireFTP, Console², ColorZilla ইত্যাদি।

কোড এডিটর: জীনি
প্রোগ্রামিং করার জন্য জীনি (Geany) হচ্ছে খুবই ছোট এবং হালকা একটি IDE বা কোড এডিটর। এটি খুব দ্রুত কাজ করে, ফলে যে কোন গতির কম্পিউটারে জীনিকে সহজেই চালানো যায়। এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – সিনট্যাক্স হাইলাইটিং অর্থাৎ কোডকে বিভিন্ন রঙের ফন্টে দেখার ব্যবস্থা , কোড ফোল্ডিং বা বড় কোডকে সংক্ষিপ্ত আকারে দেখা, অটো কমপ্লিশন বা বিভিন্ন ভেরিয়েবল সয়ংক্রিয়ভাবে লেখা, কোডকে কম্পাইল এবং এক্সিকিউট করার ব্যবস্থা, সাধারণ প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। www.geany.org সাইট থেকে লিনাক্স এবং উইন্ডোজ উভয় প্লাটফরমের জন্য জীনি ডাউনলোড করা যায়।

এফটিপি ক্লায়েন্ট: ফাইলজিলা
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পর তা সার্ভারে অপলোড করতে প্রয়োজন একটি এফটিপি (FTP) ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার। নেটে অনেক ধরনের এফটিপি ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়, যার মধ্য Filezilla নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার সফটওয়্যার। এর ইন্টারফেস বা বাহ্যিক চেহারা বেশ সহজ সরল এবং উন্নতমানের। ফাইলজিলার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সার্ভারের সাথে একসাথে সর্বোচ্চ ১০ টি সংযোগ স্থাপন করতে পারে, ফলে ফাইল আদান-প্রদান হয় দ্রুতগতিতে। উইন্ডোজ, ম্যাক ও লিনাক্সের চালু হতে সক্ষম এই সফটওয়্যারটি পাওয়া যাবে www.filezilla-project.org সাইট থেকে। উবুন্টু ব্যবহারকারীরা সাইন্যাপটিক প্যাকেজ ম্যানেজার সফটওয়্যার থেকে সরাসরি এটি ইন্সটল করতে পারবেন।

সাবভার্সন ক্লায়েন্ট: রেপিড এসভিএন
সাবভার্সন (Subversion) হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ভার্সন কন্ট্রোল সিস্টেম। একই প্রজেক্টে যখন একাধিক প্রোগ্রামার কাজ করে তখন সাবভার্সন ব্যবহার করে কাজ করাটা অপরিহার্য হয়ে উঠে। এই পদ্ধতিতে মূল প্রজেক্টটি একটি সার্ভারে জমা থাকে। কাজ শুরু করতে প্রত্যেক প্রোগ্রামার সার্ভার থেকে প্রজেক্টের একটি কপি নিজের কম্পিউটারে নিয়ে আসে এবং কাজ শেষ হলে তা সার্ভারে জমা দেয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে একজনের কোড দিয়ে অন্য আরেকজনের কোড প্রতিস্থাপন হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। প্রয়োজনবোধে পূর্ববর্তী যে কোন ভার্সনের কোডকে ফেরত পাওয়া যায়। এই সাবভার্সনকে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যবহার করতে একটি চমৎকার ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার হচ্ছে রেপিড এসভিএন (RapidSVN)। নতুনদের জন্য এটি একদিকে যে রকম সহজ ইন্টারফেস প্রদান করে, অন্যদিকে অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদেকে সাবভার্সনের সকল ফিচার ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। www.rapidsvn.org সাইট থেকে সকল অপারেটিং সিস্টেমের জন্য রেপিড এসভিএন ডাউনলোড করা যায়।

ডিফ ও মার্জ: মেল্ড

মেল্ড (Meld) হচ্ছে একটি ভিজুয়্যাল ডিফ ও মার্জ (Diff & Merge) সফটওয়্যার। অর্থাৎ এই সফটওয়্যার দিয়ে দুটি একই ধরনের ফাইলের পার্থক্যগুলো দেখা যায় এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা যায়। এটিকে রেপিড এসভিএন সফটওয়্যারের সাথেও সংযুক্ত করা যায়। একই ফাইলকে দুইজন প্রোগ্রামার পরিবর্তন করলে এই সফটওয়্যারটি খুব সহজেই প্রত্যেকের কোডকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেয়। এই পদ্ধতিতে সাবভার্সনের কনফ্লিক্টকে সহজেই সমাধান করা যায়।

ভার্চুয়াল মেশিন: ভার্চুয়ালবক্স
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে যারা কাজ করেন তাদের জন্য অত্যন্ত সাহায্যকারী একটি সফটওয়্যার হচ্ছে ভার্চুয়ালবক্স (VirtualBox) নামক এই ভার্চুয়াল মেশিন সফটওয়্যারটি। এর মাধ্যমে যে কোন অপারেটিং সিস্টেমকে লিনাক্সের মধ্যেই চালানো যায়। প্রায় সময় দেখা যায় একই ওয়েবসাইটকে ভিন্ন ভিন্ন ব্রাউজার ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রদর্শন করে। তাই ওয়েবসাইট তৈরি করার পর তা সকল জনপ্রিয় ব্রাউজারে দেখে নেয়া অত্যন্ত জরুরী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফায়ারফক্স কোন রকমের ঝামেলা ছাড়াই একটি ওয়েবসাইটকে প্রদর্শন করে। কিন্তু ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে CSS ও Javascript এর কোডকে সঠিকভাবে প্রদর্শন করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার যেহেতু লিনাক্সে চালু হয় না তাই ভার্চুয়ালবক্সের মাধ্যমে উইন্ডোজ ইন্সটল করে তাতে ওয়েবসাইট পরীক্ষা করে দেখা যায়।

ইমেইজ এডিটর: গিম্প
আমাদের দেশে ইমেইজ এডিটিং সফটওয়্যার বলতে সবাই ফটোশপকেই বোঝে। অথচ ফটোশপের বিকল্প অত্যন্ত শক্তিশালী সফটওয়্যার হচ্ছে গিম্প (Gimp)। এটি উবুন্টু লিনাক্সের সাথে ইন্সটলকৃত সফটওয়্যার হিসেবে পাওয়া যায়। উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা www.gimp.org সাইট থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারবেন। একটি আধুনিক ইমেইজ এডিটিং সফটওয়্যারে যে সকল ফিচার থাকা প্রয়োজন তার সবই গিম্পে রয়েছে। ইন্টারনেটে গিম্পের অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে যা দিয়ে একজন নতুন ব্যবহারকারী সহজেই শিখতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.